জে.জাহেদ. চট্টগ্রাম:

আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত বিষয়টির কোন কূল কিনারা করতে পারে নি দলের সিনিয়র নেতারা। পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকেই এখনও তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। মূলতই কাউন্সিলরদের মধ্যে লড়াইটা আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের। তাই দলের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা উচিত বলে মনে করছেন নগর রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

রোববার (৮ মার্চ) আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে নগরীর সার্কিট হাউজে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা। এতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে এখনও দল থেকে কোন প্রকার সিদ্ধান্তের কথা পরিস্কারভাবে জানানো হয় নি।

এদিকে, নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে রোববার (৮ মার্চ) বিকাল ৩ টায় নগরীর কেসিদে রোডের অস্থায়ী কার্যালয়ে নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) সকাল ১১টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত নগরীর থিয়েটার ইন্সটিটিউটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতারা আলোচনায় বসেন।

শনিবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে নগরীর নন্দনকাননে মোশাররফের বাসায় আবারো বৈঠক চলে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত। বৈঠকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, একটাই সিদ্ধান্ত, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মনোনয়ন বোর্ড যে মনোনয়ন দিয়েছে সেটাই চূড়ান্ত। প্রত্যাহারের জন্য বলে দিয়েছি। যদি না করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জানান, আওয়ামী লীগের যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছা প্রকাশ করে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন, তাদের সাথে আমাদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোশাররফ ভাইসহ আমরা বসেছি। উনাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তাদের বলেছি- দল মানে নীতি আর্দশ। তাই মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। সাময়িক পাওয়া-না পাওয়াকে বিবেচনায় না নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত মেনে রাজনীতি করাই একজন প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মীর কাজ। দল যাদের মনোনয়ন দিয়েছে, তাদের মেনে নিতে হবে। তাদের জিতিয়ে আনতে হবে। দলকে এগিয়ে নিতে হবে।

এদিকে, দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে কেউ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হলে তার দায় নেবেন না জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমার কাছে দলের শৃঙ্খলাই বড়। দলের শৃঙ্খলা যারা ভঙ্গ করবে তাদের দায় আমি নেব না। পরে যদি কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েন, তখন যেন আমার কাছে কেউ না আসেন, সেটাও বলেছি। আমি অমুক ভাই, তমুক ভাইয়ের রাজনীতি করি না। আমি শুধু আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি করি।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমনে ভিন্ন ছক কষছে আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের অনুসারীদের বুঝিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করাতে। পাশাপাশি একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থাকেও এই কাজে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে নানামুখী চাপ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি নির্বাচন করার সম্ভাবনা বেশি এমন বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনুগত নেতা-কর্মীদের তালিকাও এর মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ সকল প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের মামলাগুলোকেও সামনে নিয়ে আসছে ওই সংস্থার লোকজন। এর মধ্যে বেশ কিছু পুরানো মামলার ওয়ারেন্টও হয়ে গেছে বলে একটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, নগরীর ৪১ সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে এবার প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর পদে ৫৫ জনকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিতে আসা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ১৯ জন এবার সমর্থন পাননি। তাদের মধ্যে ১৮ জনই এবার বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া পাঁচটি ওয়ার্ড ছাড়া প্রত্যেক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত অথবা পদ-পদবীতে থাকা ৩-৪ জন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রোববার (৮ মার্চ) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।